কোরবানির সময় এলেই গরু ছাগল কেনার জন্য তাগাদা শুরু হয়। কোরবানির গরু কেনার আগে কি কি বিষয়ে অবগত থাকতে হবে এমন ২০টি বিষয়ে টিপস দিব।
আমরা কোরবানির সময় শুধু মাত্র গরু কিনি না, বরং, গরুর পাশাপাশি যেকোনো গবাদি পশু কিনে থাকি। যেমন মহিষ, ভেড়া, উট, দুম্বা, ছাগল ইত্যাদি।
তবে আমাদের দেশে গরু দিয়ে বেশির ভাগ কোরবানি করা হয়। এজন্য, আজ আমরা কোরবানির গরু নিয়ে আলোচনা করবো।
কোরবানির গরু কেনার আগে নিচের বিষয়গুলো জানতে হবে:
১। কোরবানির গরুর বয়স:
প্রিয় পাঠক, আমরা অনেক সময় গরুর বয়স কত এটা না দেখেই গরু কিনে থাকি। কিন্তু, কোরবানির জন্য অন্তত ২ বছর বয়সের গরু কেনা ভালো।
এছাড়া, অতি কম বয়সের গরুর মাংসের কোয়ালিটি ভালো হয়না। যেমন: কম বয়সের গরুর মাংসের ওজন ও স্বাদের কমতি থাকবে।
২। কোরবানির গরু নিখুত হতে হবে:
কোরবানি করার জন্য অবশ্যই সুস্থ্য সবল এবং নিখুত পশু কিনতে হয়। কিন্তু সমস্যা হলো আমরা হাটে গেলে অনেক সময় ভালো মত না দেখে খুত যুক্ত গরু কিনে থাকি।
এতে করে আমাদের কোরবানি ত্রুটিযুক্ত হতে পারে। আবার আমরা কোরবানি করেও তৃপ্তি পাই না।
তাই নিখুত গরু কিনতে হবে। যেমন: গরু লেজ কাটা, দাঁত ভাঙ্গা, কান কাটা, চোখ ভালো কিনা, তলপেটে কোনো সমস্যা আছে কিনা ইত্যাদি দেখে নিতে হবে।
৩। কোরবানির গরুর মাংস নিরাপদ কিনা:
গরু মোটাতাজা করন পদ্ধতিতে গরু পালন করা হয়ে থাকলে সেই গরুর মাংস অনেক সময় অনিরাপদ হতে পারে।
কারণ আজকাল অনেক অসাধু খামারিরা গরুকে অনিরাপদ উপায়ে মোতটাতাজা করে থাকে। যেমন: অনেক খামারি গরুকে বিষাক্ত ফিড, ইউরিয়া, ট্যাবলেট ইত্যাদি খাওয়ায়।
সুতরায় কোরবানির গরু কোন পদ্ধতিতে পালন করা হয়েছে, সেটা অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত।
৪। কোরবানির গরু পরিবহন:
আপনি যদি অনেক দূরের কোনো হাটে কোরবানির গরু কিনতে যান, তবে গরু কেনার পরে, সেটি বাসায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা আছে কিনা সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
যেমন ধরেন, আপনি ঢাকা গাবতলি হাট থেকে কোরবানির একটি গরু কিনলেন, নিয়ে যেতে হবে যাত্রাবাড়ি। কিন্তু, কোনো পরিবহন পেলেন না।
এমন ক্ষেত্রে অনেক ঝামেলায় পরতে পারেন। তাই পরিবহনের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
৫। কোরবানির গরু বাসায় রাখা ও খাবার:
আপনি যদি কোরবানির কয়েকদিন আগে গরু কেনার কথা ভাবেন, তবে গরু কিনে আপনার বাসায় কোথায় নিয়ে রাখবেন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়াও, গরু শুধু রাখলেই হবে না, গরুর খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। গরুকে গোসল করানো এবং পরিষ্কর রাখতে হয়।
কোরবানির গরু বিষয়ে আরো ১৫ টি টিপস:
- গরুর গয়ের চামড়া টাইট হতে হবে।
- গরুর গোবর দেখে নিশ্চিত হতে হবে যে কোনো সমস্যা আছে কিনা। যেমন: গোবর পাতলা হওয়া যাবে না।
- কোরবানির গরু চঞ্চল হতে হবে। নেতিয়ে পড়া গরু অসুস্থতার লক্ষণ।
- গরু পরিবহনের সময়, ট্রাকে তোলার সময় বা নামানোর সময় আঘাত প্রাপ্ত যেনো না হয়।
- মেয়ে গরু কিনলে, পেটে বাচ্চা আছে (প্রেগনেন্ট) কিনা, তা হাটে থাকা গরুর ডাক্তার দিয়ে চেক-আপ করাতে হবে।
- পরিচিত ও বিশ্বস্ত খামারির নিকট থেকে গরু কেনার চেষ্টা করতে হবে।
- অনলাইনে গরু কিনলে গরু সম্পর্কে সঠিক ধারনা পাওয়া যায় না। তাই নিজে দেখে গরু ক্রয় করা চেষ্ট করবেন।
- কোরবানির কিছু দিন আগে গরু কিনলে, গরু কি কি খায়, তা বিক্রেতার কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
- বড় গরু কিনে আনার পরে স্ট্রোক থেকে বাঁচাতে, গরুর মাথার উপর ফ্যান দিয়ে রাখতে হবে।
- গরুর সাথে সেলফি তোলার সময় সতর্ক থাকতে হবে (সেলফি না তোলা উচিত), ছোট বাচ্চাদের কোরবানির গরুর কাছে একা একা যেতে দিবেন না।
- ১টির বেশি গরু ক্রয় করলে, গরু বাসায় নিয়ে এসে নিরাপদ দূরত্বে বেঁধে রাখবেন।
- কোরবানির হাটে প্রচুর দালাল থাকে। দালাল হতে সাবধান থাকতে হবে।
- কোরবানির গরুটি প্রফেশনাল কসাই দিয়ে জবাই করাবেন এবং মাংস কাটিং করাবেন।
- শরিয়া মোতাবেক ছোয়াবের (নেকির) আশায় মাংস বন্টন করবেন। কোরবানির চামড়া কোনো মাদ্রাসা বা এতিমখানায় দেওয়ার চেষ্ট করবেন।
- কোরবানি দেওয়ার পরে আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য সচেতন থাকবেন।
কোরবানি বিষয়ে কিছু প্রশ্ন-উত্তর:
আরবি যিলহজ মাসের ১০ তারিখে কোরবানি করতে হয়। তবে ১০, ১১ ও ১২ এই ৩ দিন কোরবানি করার নিয়ম রয়েছে।
২০২৩ সালে জুন মাসের ২৯ তারিখে কোরবানির ঈদ হবে বাংলাদেশে।
কোরবানির মাংস কিভাবে বন্টন করবেন, এটা নিকটস্থ ইসলামিক জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে জেনে নেওয়া উত্তম। তবে, সাধারণত, কোরবানির মাংস ৩ ভাগ করে ১ ভাগ নিজের জন্য, ১ ভাগ আত্মীয় ও প্রতিবেশিদের এবং ১ ভাগ গরিব মিসকিনদের দেওয়ার বিষয়ে অধিক সম্মতি পাওয়া যায়। তবে ৩ ভাগ করা বাধ্যতামূলক নয় মর্মেও মতামত রয়েছে।
না। ঈদের দিনে রোজা রাখা যায় না। কোরবানির ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ।
সামর্থ্য থাকলে তবেই কোরবানি করতে হবে। আর সামার্থ্য অনুযায়ী কোরবানি করতে হবে। সামর্থ্য থাকলে ১টির অধিক পশু কোরবানি করা যায়।
হ্যাঁ। ভেড়া কোরবানি করা যায়।
হ্যাঁ। আমাদের দেশে মহিষ গৃহপালিত পশু। তাই মহিষ কোরবানি করা যায়।
কোরবানির সালাত পড়ার পরে কোরবানি দেওয়া শুরু হয়। ৩ দিন পর্যন্ত কোরবানি দেওয়া যায়।
সোর্স- ইন্টারনেট, গুগল